জন্ম থেকেই মানুষকে লড়াই করে বেঁচে থাকতে হয়। জীবনের প্রতি মুহূর্তে, প্রতি পর্যায়ে লড়াই করে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে হয়। আমরা যখন ছোট থাকি তখন জীবনের এই কঠিন সত্যটাকে উপলব্ধি করতে পারি না, সময়ের সাথে যখন আমরা বড় হতে থাকি তখন বাস্তবটাকে বুঝতে শিখি। গ্র্যাজুয়েশনের (Graduation) পরে কেউ পরবর্তী উচ্চ শিক্ষার (Higher studies) জন্য চেষ্টা করতে থাকে, এবং সেই উচ্চ শিক্ষার খরচ বহনে অক্ষম হওয়ার জন্য সবার প্রথম তাদের উপার্জনের কথা মাথায় আসে আবার কেউ চায় গ্র্যাজুয়েশনের পরেই রোজগার করে পারিবারিক দায়িত্ব পালন করতে। ঠিক তখনই তারা ব্যাবসা বা চাকরি করার কথা ভাবে, এবং এটাও ভাবে যে এই দুটির মধ্যে তার জন্য কোনটি ভালো হবে।
চাকরি ও ব্যাবসা এই দুটির মধ্যে পার্থক্য কি? এই প্রশ্নটি আমাদের সকলকেই জীবনের কোনো না কোনো সময় ভীষণ ভাবায়, আমাদের জন্য কোনটা ভালো হবে? একজন ব্যাক্তির জন্য এই দুটির কোনটি উপযুক্ত হবে তা অনেক গুলি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে থাকে যেমন, তাঁর শিক্ষা, জীবনের লক্ষ্য, আগ্রহ, দক্ষতা, অভিজ্ঞতা, পারিবারিক অবস্থা, ব্যক্তিগত পরিস্থিতি, ইত্যাদি। অতএব, এই ধারণা রাখা ঠিক নয় যে ব্যাবসা ভালো বা চাকরি ভালো। বিভিন্ন কারণের উপর নির্ভর করে কারও জন্য ব্যবসা করা উপযুক্ত হতে পারে বা কারোর জন্য চাকরি। তাই চলুন আজ জেনে নিই আপনার জন্য এই দু’য়ের মধ্যে কোনটি উপযুক্ত।
চাকরি (Job) : চাকরির কোন নির্দিষ্ট সংজ্ঞা নেই। এটিকে একটি আংশিক বা পূর্ণ–সময়ের কাজ হিসেবে চিহ্নিত করা যেতে পারে। এটি একটি নির্দিষ্ট ধরনের দায়িত্ব বা কর্তব্য হিসেবে স্বীকৃত হতে পারে। চাকরি আপনাকে একটি পূর্বনির্ধারিত বেতন দেয়। যাইহোক, চাকরির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল যে সবসময় এমন একজন ব্যক্তি থাকবেন যিনি আমাদের চেয়ে উচ্চতর এবং সেই ব্যক্তিই আমাদের বেতন বা পারিশ্রমিক নির্ধারণ করবেন।
ব্যবসা (Business) : ব্যবসা হল দুই বা ততোধিক লোকের একটি সংগঠন যা একটি সাধারণ লক্ষ্য অর্জনের জন্য কাজ করে। এটি শুধুমাত্র একজন ব্যক্তি চালিতও হতে পারে। একটি ব্যবসায়িক সংগঠন মুনাফাভিত্তিক অথবা মুনাফাহীন ও হতে পারে।
চাকরি ও ব্যবসার মধ্যে পার্থক্য (Difference between job and business) :
চাকরি (Job) | ব্যবসা (Business) |
১। কোনো উচ্চপদস্থ ব্যক্তির অধীনে কাজ করতে হয়। | ১। নিজের ব্যবসা হলে কারোর অধীনে কাজ করতে হয়না। |
২। চাকরিতে একটি নির্দিষ্ট পূর্বনির্ধরিত বেতন পাওয়া থাকে। | ২। ব্যবসার ক্ষেত্রে কোনো নির্দিষ্ট পূর্বনির্ধারিত বেতন থাকে না। কখনো আয় বেশি হয় কখনো কম হয়। আবার কখনো ব্যবসায় ক্ষতি ও হতে পারে। |
৩। চাকরির ক্ষেত্রে তেমন লাভ বা ক্ষতির ঝুঁকি নেই। | ৩। ব্যবসায় লাভ বা লোকসান এর ঝুঁকি চাকরির তুলনায় অনেকটাই বেশি। |
৪। চাকরির ক্ষেত্রে নিজের মতো করে কাজ করার তেমন কোনো স্বাধীনতা নেই। | ৪। ব্যবসায় লাভ বা লোকসান এর ঝুঁকি বেশি থাকলেও এক্ষেত্রে নিজের মত কাজ করার স্বাধীনতা অনেক বেশি। |
৫। চাকরির ক্ষেত্রে সৃজনশীল হওয়ার সুযোগ খুবই কম। | ৫। ব্যবসায় নিজের সৃজশীলতাকে কাজে লাগিয়ে ব্যবসার আরও উন্নতি করা যায় যা লাভদায়ক হয়। |
উপরিউক্ত টেবিলে চাকরি ও ব্যবসার কিছু মূল পার্থক্য বর্ণনা করা হয়েছে যা আপনাকে চাকরি ও ব্যবসা কে স্বতন্ত্রভাবে চিনতে বা বুঝতে সাহায্য করবে।
চাকরির কিছু সুবিধা ও অসুবিধা (Advantage and disadvantage of Job) : চাকরিতে অনেক ধরনের সুবিধা ও অসুবিধা উভয়েরই সম্মুখীন হতে হয়, সেই সুবিধে ও অসুবিধের কিছু এখানে তালিকাভুক্ত করা হলো।
- সুবিধা (Advantages) :
১. চাকরির ক্ষেত্রে একটি পূর্বনির্ধরিত স্থায়ী বেতন পাওয়া যায় যা থেকে আপনি আপনার একটি সুষ্ঠ জীবনধারা বজায় রাখতে পারেন।
২. চাকরিতে আয়ের ক্ষতি হওয়ার সুযোগ খুবই কম(না বললেও চলে)।
৩. চাকরিতে প্রতিদিনের কাজের একটি সময়সীমা থাকে, যেমন সকাল ৯ টা থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত।
৪. চাকরি তে সুনির্দিষ্ট আয় ছাড়াও আরও অন্যান্য ধরনের আর্থিক সুযোগ সুবিধা পাওয়া যায়, যেমন ব্যাংক থেকে লোন পাওয়া ইত্যাদি।
- অসুবিধা (Disadvantages) :
১. চাকরির ক্ষেত্রে নিজের মত করে কাজ করার উপায় বা বিকল্প নেই। উচ্চতর কর্তৃপক্ষ দ্বারা নির্দেশিত কাজই করতে হবে।
২. নিজের সৃজশীলতাকে চাকরির ক্ষেত্রে কাজে লাগানো যায়না।
৩. অনেকের কাছে চাকরি করা টা স্বাধীন নাও মনে হতে পারে কারণ সর্বদা সেই ব্যক্তি কে কোনো উচ্চতর কর্তৃপক্ষের অধীনে কাজ করতে হয়।
ব্যবসার কিছু সুবিধা ও অসুবিধা (Advantage and disadvantage of Business) : চাকরির মত ব্যবসাতেও অনেক সুবিধার সাথে অসুবিধাও আছে যার কয়েকটি উল্লেখ করা হল।
- সুবিধা (Advantages) :
১. ব্যবসার সবথেকে বড় সুবিধা হলো এই যে, এক্ষেত্রে কারোর অধীনে থেকে কাজ করতে হয়না যদি নিজের ব্যবসা হয়।
২. ব্যবসায় ভাবে কাজ করা যায়, কোনো উচ্চতর কর্মচারীর নির্দেশ থাকে না।
৩. ব্যবসায় নিজের কাজে লাগিয়ে ব্যবসাটি কে আরও বাড়িয়ে তোলা যায়।
৪. ব্যবসায় নিজের ও দক্ষতার উন্নয়ন ঘটে।
- অসুবিধা (Disadvantages) :
১. ব্যবসার সর্বপ্রধান অসুবিধে হলো এই যে এটি মোটেও নির্দিষ্ট পরিমাণ বেতন প্রদান করে না।
২. সর্বদা একটা লাভ কতটা হবে বা লোকসান হয়ে যাবে কিনা তার ঝুঁকি থেকে যায়।
৩. ব্যবসা শুরু কালীন বা ব্যবসা বৃদ্ধি কালীন যে সকল অর্থ বিনিয়োগকাীদের হয় তা সহজে খুঁজে পাওয়া কঠিন।
চাকরি ও ব্যবসা কি? কার কি সুবিধা ও অসুবিধা, চাকরি ও ব্যবসার মূল পার্থক্য কি? এগুলি আলোচনা করে উভয় চাকরি ও ব্যবসা সম্মন্ধে একটি সংক্ষিপ্ত ধারণা দেওয়া হলো। চাকরি অথবা ব্যবসা কোনোটিই কারোর জন্য নিখুঁত বিকল্প নয়, সকলেরই নিজস্ব স্বাতন্ত্র্য পছন্দ রয়েছে, সেই পছন্দ অনুসারে বা কোন ক্ষেত্রে কাজ করে নিজস্ব উন্নয়ণ হবে বা কোন ক্ষেত্রে আর্থিক সুযোগ সুবিধা বেশি পাওয়া যাবে সেগুলো বিবেচনা করে চাকরি নাকি ব্যবসা করা ঠিক হবে তা বিচার করতে হবে। যদি কেউ মনে করেন যে তিনি কারোর অধীনে থেকে কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ নন, তবে তার জন্য ব্যাবসা উপযুক্ত। ব্যাবসার ক্ষেত্রে নিজস্ব উদ্যম খুবই গুরুত্বপূর্ণ যেহেতু এখানে নিজেই নিজের বস (boss), কোনো ভুল হলে কেউ আপনাকে যেমন বকাবকি করবে না তেমনই ভুল গুলিও নিজের থেকেই ঠিক করে নিতে হবে। কিন্তু অন্যদিকে চাকরির ক্ষেত্রে আপনার একটি নির্দিষ্ট পরিসর থাকবে যার বাইরে আপনি চাইলেও সেটিকে অতিক্রম করতে পারবেন না। তবে এক্ষেত্রে আপনার ঝুঁকি অবশ্যই কম, আপনি মাসের শেষে আপনার নির্ধারিত বেতন (salary) অবশ্যই পাবেন। ব্যাবসার ক্ষেত্রে আপনি কোনো মাসে কম কোনো মাসে বেশি আবার কখনো কোনো লাভ নাও করতে পারেন। উপরিউক্ত সব কিছু বিবেচনা করে এবং আপনার জন্য কোনটি বেশি লাভজনক হবে তা আপনাকে বিবেচনা করে আপনার ভবিষ্যত গড়ে তুলতে হবে। আপনার সুন্দর ও সুখী ভবিষ্যতের জন্য অনেক শুভ কামনা রইলো।